ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস ২০২৫
ভালোবাসা দিবস, বা ভ্যালেন্টাইনস ডে, প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হয়। এটি প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব এবং প্রিয়জনদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের একটি বিশেষ দিন। তবে এর ইতিহাস বেশ পুরোনো এবং রহস্যময়।
ভ্যালেন্টাইনের উৎপত্তি
ভ্যালেন্টাইন্স ডে-এর নামকরণ করা হয়েছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে এক বা একাধিক খ্রিস্টান সন্তের নামে। এই দিবসের ইতিহাসের মূল উৎস রোমান সাম্রাজ্যের সময়ে। তখন সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তরুণ পুরুষদের বিয়ে নিষিদ্ধ করেন, কারণ তিনি মনে করতেন, অবিবাহিত পুরুষরা যুদ্ধে ভালো সৈনিক হতে পারে। কিন্তু একজন ক্যাথলিক ধর্মযাজক, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন, এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রেমিক-প্রেমিকাদের গোপনে বিয়ে দেন।
এই কর্মকাণ্ডের জন্য সম্রাট ক্লডিয়াস তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কারাগারে থাকা অবস্থায়, কথিত আছে যে তিনি কারারক্ষীর অন্ধ কন্যার চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন এবং তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। মৃত্যুর আগে, তিনি তাকে একটি চিঠি লেখেন, যেখানে “তোমার ভ্যালেন্টাইন” (From Your Valentine) বলে স্বাক্ষর করেন। এরপর ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
মধ্যযুগে জনপ্রিয়তা
মধ্যযুগে, বিশেষত ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিন হিসেবে পরিচিতি পায়। তখনকার বিশ্বাস ছিল, এই দিন পাখিরা তাদের সঙ্গী নির্বাচন করে। বিখ্যাত কবি জেফ্রি চসার তার কবিতায় ভালোবাসা দিবসের ধারণাকে তুলে ধরেন, যা পরবর্তীতে ইউরোপজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আধুনিক ভালোবাসা দিবস
ভালোবাসা দিবসের আধুনিক রূপের বিকাশ ঘটে ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দীতে, যখন হাতে লেখা ভালোবাসার কার্ড বিনিময়ের প্রচলন শুরু হয়। পরে, ২০শ শতকে বাণিজ্যিকীকরণের ফলে, কার্ড, ফুল, চকোলেট ও উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হতে থাকে।
বর্তমানে ভালোবাসা দিবস সারা বিশ্বে উদযাপিত হয়, যদিও বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্মে এর গ্রহণযোগ্যতা ভিন্ন। কিছু দেশে এটি শুধুমাত্র রোমান্টিক ভালোবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বন্ধু ও পরিবারের মধ্যেও ভালোবাসা প্রকাশের দিন হিসেবে পালিত হয়।
এইভাবে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভালোবাসা দিবস প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা ভালোবাসার শক্তিকে উদযাপন করার একটি বিশেষ দিন হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়।